সুজাতপুর কলেজ
সুজাতপুর কলেজ একটি ডিগ্রি কলেজ। কলেজটি ১৯৯৭ইং সালে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলাস্থ ইসলামাবাদ ইউনিয়নের অন্তর্গত সুজাতপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব এম.এ ওয়াদুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও এলাকার মানুষের সহযোগীতায় এ বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠার মুখ দেখে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দাউদকান্দির ঐতিহাসিক গোয়ালমারী যুদ্ধে মারাত্মক আহত হয়েও এলাকার উন্নয়নের জন্য এম.এ ওয়াদুদ দ্বিতীয় আরেকটি যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চাঁদপুর জেলার দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা। এলাকাবাসীর বহুদিনের প্রানের দাবী ছিল এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম থেকেই তিনটি বিভাগ চালু আছে। একঝাঁক তরুন শিক্ষকমন্ডলী, যোগ্য অধ্যক্ষ ও সুযোগ্য পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। ১৯৯৯ইং সাল থেকে প্রতিবছরই কলেজটির রেজাল্ট থানা ও জেলা পর্যায়ে অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। ফলাফলের উত্তরোত্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিত সাপ্তাহিক টিউটোরিয়াল, ক্লাস টেস্ট, ক্লাসে প্রাইভেটের মতো করে পড়ানো, দূর্বল শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করে আলাদা পাঠদান, সহপাঠক্রমিক শিক্ষা ও অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কলেজটির চারিদিকে পাকা সড়ক থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করতে পারছে। এছাড়া কলেজটির রয়েছে সুবিশাল খেলার মাঠ। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে রয়েছে টিনসেড ছাত্রাবাস। কলেজের পাশেই রয়েছে একটি হাইস্কুল, কিন্ডারগার্টেন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রাইমারী স্কুল ও সুন্দর একটি জামে মসজিদ। যা কলেজের পরিবেশকে করেছে আরও মনোরম ও বৈচিত্রময়।
কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসঃ
ইসলামাবাদ ইউনিয়নে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য মতলব উত্তরের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি সুজাতপুর গ্রামের পাশে অবস্থিত নন্দলালপুর বাজারে কিছু জমি ক্রয় করেন। কিন্তু তাঁর শর্ত ছিল, কলেজের নাম হতে হবে তাঁর নামে। এখানেই এলাকাবাসী তাঁর সাথে একমত হতে পারেনি। এলাকাবাসীর দাবী ছিল, কলেজটির নাম হবে তাদের প্রিয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছারছিনার সম্মানিত পীর ছৈয়দ নেছার সাহেবের নামে। কিন্তু তিনি এতে রাজী না হওয়ায় এলাকাবাসী বিশেষ করে সুজাতপুর গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে এলাকায় উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়ে তারা সুজাতপুর গ্রামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করে। গ্রামবাসীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সুজাতপুর গ্রামের স্বনামধন্য মুন্সি পরিবার বিশেষ করে জনাব এম.এ ওয়াদুদ কলেজটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কলেজের বর্তমান জায়গায় জমি খরিদ করে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে এলাকার সর্বস্তরের জনগন সার্বিকভাবে কলেজের প্রতি তাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। এভাবে ১৯৯৭ইং সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ইং সালেই এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৎকালীন কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়কে সংবর্ধিত করা হয়। এ সংবর্ধনায় অতিশয় আনন্দিত ও অভিভুত হয়ে তিনি কলেজটিতে একই সাথে তিনটি বিভাগের অনুমোদন দেন। এরপর সে বছরই তিনটি বিভাগে প্রায় ২০০ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। কলেজ পরিচালনা পর্ষদ প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেন। প্রথমদিকে কলেজের এমপিও না হওয়ায় শিক্ষকগণ কিঞ্চিৎ বেতনে, খেয়ে না খেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৯৭ইং সাল থেকে ২০০১ইং সাল পর্যন্ত কলেজটি সরকারি আর্থিক সহযোগীতা অর্থাৎ এমপিওভূক্তি ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০০১ সালে কলেজটি এমপিওভূক্ত হয়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে কলেজটিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রায় ৪০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। তবে কলেজের আধুনিক ভবন না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা স্বচক্ষে দর্শন করে তৎকালীন মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব এয়ার ভাইস মার্শাল(অবঃ) এম. রফিকুল ইসলাম কলেজের জন্য একটি চারতলা ভবনের বরাদ্দ দেন। এজন্য কলেজের পক্ষ থেকে তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা প্রদান করে তাঁর এ অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। কলেজের পাশেই ইউনিয়ন পরিষদ থাকায় পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান সাহেব মাঝে মাঝে কলেজের খোঁজ-খবর নেন এবং কলেজের উন্নয়নের ব্যাপারে যথাসাধ্য সহযোগীতা প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কলেজটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যিনি সুখ-দুঃখ সর্বাস্থায় কলেজের পাশে এসে দাঁড়ান তিনি হলেন ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সাবেক সফল মেম্বার ও ধর্মপ্রান ব্যক্তি আলহাজ্ জনাব মোফাজ্জল হোসেন। ২০১২ সাল থেকে কলেজটিতে পূর্নাঙ্গ এইচ. এস. সি পরিক্ষা কেন্দ্র চালু আছে। ২০১৫ সাল থেকে কলেজটি ডিগ্রি কলেজে উন্নীত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র :
মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩নং সেক্টরের অধীনে K-Force এর মেঘনা অঞ্চলের সদর দপ্তর ছিল তৎকালীন সুজাতপুর জুনিয়র হাই স্কুল। সুজাতপুর নেছারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সুজাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসমূহে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা, অস্ত্রাগার ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে (যা বর্তমানে সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের খেলার মাঠ) নিয়মিত মুক্তিবাহিনী, বিএলএফ ও এফএফএফ-সহ প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধার নিয়মিত প্রশিক্ষণ পরিচালিত হতো। শারিরীক সক্ষমতা ও আধুনিক উন্নত অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়মিত পরিচালনা করা হতো। উক্ত সদর দপ্তরে প্রতিদিন সামরিক কায়দায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অবনমিত করা হতো। পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হতো। এ কেন্দ্রের নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় স্থানীয় জনগন সর্বাত্মকভাবে সহযোগীতা করে। তাদের প্রতি মুক্তিযোদ্ধারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।